ভূমিকা
বর্তমান যুগে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে মানুষ সহজেই অশ্লীলতা ও ফিতনায় লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। টিভি, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিজ্ঞাপনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে আত্মরক্ষা করা একজন মুসলিমের জন্য অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি ঈমানকে দুর্বল করে এবং মানুষকে গুনাহের দিকে ধাবিত করে।
কিন্তু ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা আমাদের এ ধরনের ফিতনা থেকে বাঁচার উপায় বাতলে দিয়েছে। কুরআন ও সুন্নাহতে অশ্লীলতা এড়িয়ে চলার নির্দেশ এসেছে বহুবার। এই লেখায় আমরা অশ্লীলতার কুফল, তা থেকে বাঁচার ইসলামিক পদ্ধতি এবং বাস্তব জীবনে এসব পদ্ধতি প্রয়োগের কৌশল নিয়ে আলোচনা করবো:-
১. অশ্লীলতা ও তার ভয়াবহতা
কুরআন ও হাদিসের আলোকে অশ্লীলতার নিষেধাজ্ঞা
কুরআনে আল্লাহ বলেছেন:
“তোমরা ব্যভিচারের নিকটেও যেও না। নিশ্চয় এটি একটি অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট পথ”।
📖 (সূরা আল-ইসরা: ৩২)
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
“আমি তোমাদের এমন কোনো বিষয় রেখে যাচ্ছি না, যা তোমাদের জাহান্নামের কাছাকাছি নিয়ে যায়, আর আমি তা থেকে তোমাদের সতর্ক করিনি; এবং আমি তোমাদের জান্নাতের কাছাকাছি নিয়ে যায়, আর আমি তা তোমাদের জানাইনি”।
(মুসনাদ আহমদ: ১৬৫৯)
অশ্লীলতা শুধু দৃষ্টির গুনাহেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি অন্তরে কুপ্রভাব ফেলে এবং ধীরে ধীরে মানুষকে হারাম সম্পর্ক, ব্যভিচার ও নৈতিক অধঃপতনের দিকে ঠেলে দেয়।
২. অশ্লীলতা থেকে বাঁচার ইসলামিক উপায়
১. তাকওয়া বা আল্লাহভীতি বৃদ্ধি করা
▶ তাকওয়া বা আল্লাহভীতি মানুষকে সকল গুনাহ থেকে দূরে রাখে। যখন কেউ বুঝবে যে আল্লাহ সর্বদা তাকে দেখছেন, তখন সে গুনাহ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবে।
প্রতিদিন ইস্তিগফার করা আল্লাহর শাস্তি ও জান্নাত-জাহান্নামের কথা চিন্তা করা।
আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের চেষ্টা করা।
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না”।
(সূরা আত-তালাক: ২-৩) 📖
২. চোখের হিফাজত করা (Lowering the Gaze)
আল্লাহ বলেছেন:
“ঈমানদার পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। এটাই তাদের জন্য পবিত্রতম পথ”।
📖 (সূরা আন-নূর: ৩০)
- রাস্তা চলার সময় দৃষ্টি অবনত রাখা
- মোবাইল ও ইন্টারনেটে হারাম কন্টেন্ট এড়িয়ে চলা
- সোশ্যাল মিডিয়ায় অশ্লীলতা ছড়ানো অ্যাকাউন্ট ও পেজ আনফলো করা
৩. সময়ের সঠিক ব্যবহার করা
অশ্লীলতার দিকে ধাবিত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো অলসতা। যাদের হাতে কাজ থাকে না, তারা সহজেই হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
- কুরআন তিলাওয়াত করা
- ইসলামিক বই পড়া ও গবেষণা করা
- হালাল কাজ ও উপার্জনে নিজেকে ব্যস্ত রাখা
হাদিসে এসেছে:
“দুই নিয়ামত সম্পর্কে বহু মানুষ প্রতারিত—স্বাস্থ্য এবং অবসর সময়”।
📖 (সহিহ বুখারি: ৬৪১২)
৪. ভালো সঙ্গ ও পরিবেশ তৈরি করা
খারাপ বন্ধু-বান্ধব ও অসৎ সঙ্গ অশ্লীলতায় আসক্তির একটি বড় কারণ। তাই নেক সঙ্গী নির্বাচন করা জরুরি।
- দ্বীনদার বন্ধুদের সঙ্গে চলাফেরা করা
- আল্লাহর ভয় আছে এমন পরিবেশে থাকা
- মসজিদ, ইসলামিক ক্লাস ও হালাল বিনোদনে নিজেকে সম্পৃক্ত করা
হাদিসে এসেছে:
“মানুষ তার বন্ধুর ধর্মের ওপর থাকে, তাই তোমাদের উচিত, কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছো, তা দেখা”।
📖 (তিরমিযী: ২৩৭৮)
৫. বিয়ে ও হালাল সম্পর্কের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া
- বিয়ের জন্য দেরি না করা
- হালাল পথে বিয়ে ও সংসার গঠন করা
- নিজের স্ত্রী/স্বামীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
“হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কারণ এটি দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হিফাজত করে”।
📖 (সহিহ বুখারি: ৫০৬৬, মুসলিম: ১৪০০)
৬. ইস্তিগফার ও তাওবা করা
কুরআনে আল্লাহ বলেছেন:
“আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা নিজেদের ওপর জুলুম করলে তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে… ”
📖 (সুরা আলে ইমরান: ১৩৫)
- প্রতিদিন অন্তত ১০০ বার ইস্তিগফার করা
- গুনাহ হয়ে গেলে সাথে সাথে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া
- নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধি করা
উপসংহার
বর্তমান যুগে অশ্লীলতা ও ফিতনা থেকে বেঁচে থাকা সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু ইসলাম আমাদের এমন সব পদ্ধতি শিখিয়েছে যা অনুসরণ করলে আমরা আমাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখতে পারবো এবং হারাম থেকে রক্ষা পাবো।
- আল্লাহভীতি ও তাকওয়া বাড়ানো
- দৃষ্টির হিফাজত করা
- সময়ের সঠিক ব্যবহার করা
- ভালো বন্ধু ও পরিবেশ গঠন করা
- ইস্তিগফার ও তাওবা করা
🔹 আমাদের উচিত নিজেকে এবং সমাজকে অশ্লীলতার ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করা এবং ইসলামি শিক্ষা ও নৈতিকতাকে জীবনে বাস্তবায়ন করা। ইনশাআল্লাহ, আমরা যদি এসব পদ্ধতি অনুসরণ করি, তাহলে অশ্লীলতার কবল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবো।
📢 এই লেখা থেকে উপকৃত হলে শেয়ার করুন এবং অন্যদের সচেতন করুন!