সম্পাদনা: ড. আব্দুল বাসির বিন নওশাদ
ইসলাম ইবাদতের আগে ইলমকে গুরুত্ব দেয় কেন?
ইসলামে কোনো ইবাদত, দাওয়াত, বিচার কিংবা জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে সঠিক জ্ঞান ছাড়া আমল গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, জ্ঞান ছাড়া ইবাদত অন্ধ আনুগত্যের নাম হয়ে যায়, যা বহু সময় শিরক, বিদআত বা গোমরাহির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
আল-কুরআনের ভাষায়,
«فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ وَٱسْتَغْفِرْ لِذَنبِكَ»
“জেনে রেখো, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং তোমার পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো” (সূরা মুহাম্মদ: ১৯)।
লক্ষ্য করুন, ‘জেনে রেখো’ (فَاعْلَمْ) এটি আমলের আগে জ্ঞান অর্জনের নির্দেশ।
ইসলাম কী দিয়ে শুরু হয়েছে?
ইসলামের সূচনা হয়েছে “পড়ো” (اقْرَأْ) এই মহান আদেশ দিয়ে। এটি কেবল একটি শব্দ নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জ্ঞান ও সচেতনতার দিকে প্রথম আহ্বান।
«اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ»
“পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন” (সূরা আল-আলাক: ১)।
o এটি ছিল কুরআনের প্রথম ওহি।
o প্রথম যে নির্দেশ আল্লাহ দিলেন, তা ছিল ইলম বা পাঠ ও চিন্তার আহ্বান।
o কোনো সালাত, সিয়াম, হজ্জ বা যাকাতের নয়; বরং শুরু হলো জ্ঞানের দাবি দিয়ে।
এর মধ্যেই স্পষ্ট যে, ইসলামে সঠিক জ্ঞান ছাড়া কোনো ইবাদত, দাওয়াহ বা পথচলা নয়।
রাসূল ﷺ বলেন,
«مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ»
“আল্লাহ যার সাথে কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করেন” (সহিহ বুখারি: হা/৭১, সহিহ মুসলিম: হা/১০৩৭)।
অর্থাৎ, দ্বীনের ইলম ছাড়া কাউকে আল্লাহ ভালো কাজের জন্য নির্বাচিত করেন না।
ইলম ছাড়া আমলের বিপদ কী?
- বিদআত ও শরিয়তবিরোধী কাজকে ইবাদত মনে করা
- নিজে বিভ্রান্ত হওয়া ও অন্যকে বিভ্রান্ত করা
- ইবাদতের ফজিলত ও সীমা না জানার কারণে বাড়াবাড়ি বা অবহেলা
- শিরক বা কুফরিতে পতনের সম্ভাবনা
আজকের বাস্তবতায় এই শিক্ষা কেন জরুরি? - আজকের সমাজে অনেকেই আলেমদের কাছ থেকে না জেনেই সরাসরি ফতোয়া দিয়ে দেয়, আমল করে ইউটিউব দেখে, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ইসলাম শেখে। অথচ একটিবারও যাচাই করে না এর দলিল কী? এটা সহীহ কিনা?
- কেউ কুরআন বা হাদীসের নাম শুনেই আমল শুরু করে দেয়, অথচ সেটা হয়তো দুর্বল বা ভুল ব্যাখ্যায় তৈরি করা হয়েছে।
ফলাফল:
আমল হয় বিদআত, শরিয়ত বিরোধী। এমনকি অনেক সময় গোনাহের কাজও হয়ে যায় ইলম ছাড়া।
তাই একজন ইমানদার কী করবেন?
১. প্রত্যেক আমলের আগে জেনে নেবেন সেটা কীভাবে করতে হয়?
২. কুরআন ও সহিহ হাদীসের আলোকে ইলম অর্জনের চেষ্টা করবেন।
৩. যেসব বিষয়ে জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে আমল করতে সাহসী হবেন না।
৪. জ্ঞান অর্জনের জন্য বিশ্বস্ত আলেম ও প্রামাণ্য উৎসের দিকে রুজু করবেন।
ইলমহীন ইবাদত অন্ধ মানুষকে দৌঁড়ানোর মতো দিক তো নেই, গন্তব্যও নেই। আর সঠিক ইলম সহ ইবাদত হচ্ছে সুস্পষ্ট মানচিত্রে নির্ভুলভাবে চলা।
শেষ কথা:
মুসলিম হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো আগে জানা, পরে করা। তবে জানতে হবে কী আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য, কী বিদআত বা বাতিল। আর জ্ঞানের সাথে আমল করলে তবেই আমল হবে আল্লাহর কাছে কবুল। আর ইলম ছাড়া আমল করলে তা হতে পারে শয়তানের ধোঁকা।
আহ্বান:
শুদ্ধ ইসলাম জানতে চাইলে শুদ্ধভাবে ইলম অর্জন করুন। কুরআন, সহীহ হাদীস ও সালাফে সালেহীনের মানহাজের আলোকে নিজেকে গড়ুন।