সম্পাদনা: ড. আব্দুল বাসির বিন নওশাদ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বাণী,
«قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ»
“অবশ্যই সফল হয়েছে মু’মিনরা” (সূরা আল-মু’মিনূন: ১)।
জীবনের প্রকৃত সফলতা কী? কেবল দুনিয়ার চাকচিক্য, সম্মান বা ধন-সম্পদ নয়; বরং সফলতা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা, জান্নাত লাভ করা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া।
কিন্তু কারা এই সফলতা পাবে? আল্লাহ তা‘আলা নিজেই সূরা আল-মু’মিনূনের শুরুতে ঈমানদারদের কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন, যা আমাদের জীবনে যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে আমরা সফলদের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হতে পারি ইনশা-আল্লাহ।
নিচে সেই বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হলো, আয়াত ও ব্যাখ্যাসহ:
১. খুশুসহকারে সালাত আদায় করা।
«الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ»
“যারা তাদের সালাতে খুশু-খুজু অবলম্বন করে” (সূরা আল-মু’মিনূন: ২)।
খুশু মানে সালাতে মনোযোগ, বিনয়, ভীতি ও প্রেমমিশ্রিত একাগ্রতা।
এটা ঈমানের প্রাণ। যে সালাতে হৃদয়ের উপস্থিতি নেই, তা গা-ছাড়া কাজের মতো হয়ে যায়। মু’মিনরা আল্লাহর সামনে নিজেদের ক্ষুদ্র, গুনাহগার ও প্রার্থনাকারী হিসেবে দাঁড়ায়।
২. অবান্তর ও নিরর্থক বিষয় থেকে বিরত থাকা।
«وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ»
“এবং যারা অনর্থক কার্যকলাপ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে” (সূরা আল-মু’মিনূন: ৩)।
মুমিন ব্যক্তি জীবনকে মূল্যবান মনে করে, সময় নষ্ট করে না। ফেসবুক স্ক্রলিং, বেহুদা আড্ডা, গান-বাজনা, অশ্লীলতা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকে।
৩. যাকাত আদায়ে মনোযোগী।
وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ»»
“এবং যারা যাকাত আদায় করে” (সূরা আল-মু’মিনূন: ৪)।
আল্লাহর নির্ধারিত আর্থিক ফরয আদায় করা মু’মিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ থেকে বুঝা যায় তারা কেবল নামাযী নয়, বরং সমাজের দায়িত্বশীলও।
৪. নিজ যৌন ইচ্ছা হালাল পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা।
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ»»
“এবং যারা তাদের যৌন অঙ্গ সংরক্ষণ করে” (সূরা আল-মু’মিনূন: ৫)।
যৌনতা জীবনের একটি স্বাভাবিক দিক। কিন্তু মু’মিনরা এ বিষয়ে আল্লাহর বিধান মেনে চলে, বিবাহের বাইরে নয় এবং নফসের কাছে আত্মসমর্পণ করে না।
৫. বিশ্বাস ও আমানতের ব্যাপারে দায়িত্ববান।
وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ»»
“এবং যারা তাদের আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করে” (সূরা আল-মু’মিনূন: ৮)।
বিশ্বাসযোগ্যতা, এটা ঈমানের অংশ। হাদীসে এসেছে,
لا إِيمَانَ لِمَنْ لا أَمَانَةَ لَهُ»»
“যার মাঝে আমানতদারিতা নেই, তার ঈমান নেই” (সহীহ আত-তারীব: হা/৩০০৪)।
৬. নিয়মিত ও যত্নসহ সালাত আদায় করা।
وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ»»
“এবং যারা তাদের সালাতসমূহের প্রতি হেফাজত করে” (সূরা আল-মু’মিনূন: ৯)।
সালাত যেন আলসেমি করে, সময় না দেখে বা গড়িমসি করে না পড়ে; বরং সময়মতো, সঠিক নিয়মে, মনোযোগ দিয়ে পড়ে।
৭. সফলতার ঘোষণা।
أُوْلَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْوَٰرِثُونَ، ٱلَّذِينَ يَرِثُونَ ٱلْفِرْدَوْسَ ۖ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ»»
“তারাই উত্তরাধিকারী যারা জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী হবে। তাতে তারা স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে” (সূরা আল-মু’মিনূন: ১০-১১)।
উপসংহার:
এই সাতটি গুণ অর্জন করা একদিনে সম্ভব না হলেও, প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে গেলে একদিন নিশ্চয়ই সম্ভব হবে ইনশা-আল্লাহ।
নবী ﷺ বলেছেন,
مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى مُؤْمِنٍ، فَلْيَنْظُرْ إِلَى هَذِهِ الْآيَاتِ مِنْ أَوَّلِ سُوْرَةِ المُؤْمِنُوْنَ»»
“যে ব্যক্তি একজন পরিপূর্ণ মু’মিনকে দেখতে চায়, সে যেন সূরা মু’মিনূনের শুরু দিকের আয়াতগুলো দেখে” (ইমাম কুরতুবী, তাফসির: ১২/৬৮)।
আপনি যদি চূড়ান্ত সফলতা চান, এই গুণগুলো অর্জনের চেষ্টা করুন। এই গুণের অধিকারীরা জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবেন, যা জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর।