You are currently viewing হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের জন্য কারা দায়ী?

হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের জন্য কারা দায়ী?

[সালাফী মানহাজ অবলম্বনে]
ড. আব্দুল বাসির বিন নওশাদ

হুসাইন ইবনে আলী (রা.)-এর শাহাদাত ইসলামের ইতিহাসে এক হৃদয়বিদারক ও শিক্ষণীয় ঘটনা। এটি ছিল প্রতারণা, বিদ্বেষ ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের করুণ পরিণতি। আজকের দিনে শিয়া ও বিদআতপন্থীরা এই ঘটনার প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করে সত্যকে আড়াল করতে চায়। কিন্তু সালাফে সালেহীন যাদের দায়ী করেছেন, আমরা সে কথাগুলো তুলে ধরছি নির্ভরযোগ্য সূত্র ও উলামায়ে সালাফের ব্যাখ্যার আলোকে।

১. কূফাবাসীগণ প্রধান দায়ী:

হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের সবচেয়ে বড় দায় কূফাবাসীদের ওপর বর্তায়। তারা তাঁকে অসংখ্য চিঠি ও দূতের মাধ্যমে আহ্বান জানায়, নেতা বানাতে চায়। কিন্তু তিনি কূফায় পৌঁছালে, তারা তাঁকে একা ফেলে দেয় ধন-সম্পদের লোভ ও ইয়াযিদের ভয়ে।
➤ ইবনু হাজর (র.) বলেন, “তারা হুসাইন (রা.)-কে ডেকেছিল, কিন্তু পরে তাঁকে ত্যাগ করে, অল্প কিছু লোক বাদে”।
➤ কিছু সাহাবী তাদেরকে সরাসরি অভিযুক্ত করেন,
সাহাবী যাইদ ইবনু আরকাম (رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ) বলেন,
“হে কূফাবাসী! তোমরাই হুসাইনকে হত্যা করেছো, তারপর কাঁদছো? আল্লাহর শাস্তি তোমাদের জন্য উপযুক্ত!”
[দেখুন: আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ইবনু কাসীর]।
উম্মে সালামা (রা.) ও ইবনু উমর (রা.) থেকেও এই দিকেই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
➤ উম্মে সালামা (রা.) বলেন,
»قَتَلُوهُ قَتَلَهُمُ اللَّهُ، وَغَرُّوهُ وَدَلُّوهُ، لَعَنَهُمُ اللَّهُ«
“তারা হুসাইনকে হত্যা করেছে, আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন। তারা তাকে ধোঁকা দিয়েছে এবং আহ্বান করে বিপদে ফেলেছে, আল্লাহ তাদের অভিশাপ দিন”।
➤ প্রতারণার উদাহরণ:
কূফার অনেকে আগে আলী (রা.)-এর সঙ্গী ছিল। কিন্তু ক্ষমতার পালাবদলে তারা হুসাইন (রা.)-কে নির্দয়ভাবে ছেড়ে দেয়।

২. ইবনু জিয়াদ হত্যার প্রশাসনিক নির্দেশদাতা:

উবাইদুল্লাহ ইবনু জিয়াদ, ইয়াযিদের নিযুক্ত গভর্নর, এই জঘন্য অপরাধের মূল নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী।
➤ ইবনু সালাহ (র.) বলেন, “হুসাইন (রা.)-কে হত্যা করার আদেশ ইবনু জিয়াদই দিয়েছিল”।
সে বলেছিল,
“তাকে বন্দি করো, আর যদি যুদ্ধ হয় হত্যা হলেও ক্ষতি নেই”।
➤ তার অপমানজনক পরিণতি:
ইমাম যুহরী (র.) বর্ণনা করেন,
“এক সময় ইবনু জিয়াদের কাটা মাথা কূফার মসজিদের চত্বরে রাখা হলে একটি সাপ এসে তার নাকের ভিতর ঢুকে যায়”।
এই বর্ণনাকে শাইখ আলবানী “সহীহ” বলেছেন।

৩. উমর ইবনু সাদ লোভী সেনাপতি:

উমর ইবনু সা’দ, সাহাবী সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা.)-এর পুত্র তবে সাহাবী নন। তিনি কূফার সেনাপতির দায়িত্বে ছিলেন এবং রাজ্য শাসনের লোভে হুসাইন (রা.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।
মুহাদ্দিসগণ তাঁর কাছ থেকে হাদীস গ্রহণ করতেন না এই অপরাধের কারণে।

৪. শিমর ইবনু যিল জাওশন হিংস্র উসকানিদাতা:

শিমর ছিল হিংস্র ও নিষ্ঠুর ব্যক্তি। সে ইবনু জিয়াদকে উসকানি দেয় ও চুক্তির কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করতে দেয়নি।
সবশেষে, যুরআ ইবন শারিক হুসাইন (রা.)-কে প্রথম আঘাত করে এবং সিনান ইবন আনাস আন-নাখয়ী তাঁর দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ইতিহাসের ঘৃণিততম অধ্যায় রচনা করে। এভাবেই হুসাইন (রা.) মজলূম অবস্থায় শাহাদত বরণ করেন। (ত্ববারী: ৫/৪৫৩, মাওয়াক্বিফুল মুয়ারাযা: ৩৪৭ পৃ.)।

ইয়াযিদের অবস্থান সহীহ সূত্রে নিরীক্ষণ:

➤ ইবনু তাইমিয়া (র.) বলেন, “সহীহ সূত্র অনুযায়ী, ইয়াযিদ হুসাইন (রা.)-এর হত্যায় সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি কেঁদেছিলেন এবং হত্যার আদেশ দেননি”।
ঐতিহাসিক_ঐক্যমত:
ইতিহাসবিদদের মধ্যে অধিকাংশের মতে, ইয়াযিদ সরাসরি হত্যার নির্দেশ দেননি। তবে গভর্নর নিযুক্ত করার ক্ষেত্রে দায় এড়ানো যায় না।
আজকের_শিয়া_অপপ্রচার:
শিয়ারা প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করে ইয়াযিদকে একমাত্র দায়ী করে। অথচ সত্য ইতিহাসে দায়ীদের তালিকায় কূফাবাসী, ইবনু জিয়াদ, শিমর ও উমর ইবনু সা’দ রয়েছে।
এই বিকৃত প্রচার আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের বিশ্বাসবিরোধী।
সালাফগণ এসব ফিতনা থেকে সাবধান করতে আমাদের সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরেছেন।

সমাপনী:

হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাত আমাদের জন্য শিক্ষা ও আত্মবিশ্লেষণের অনন্য বার্তা বহন করে। সালাফী মানহাজ আমাদের শেখায়:
১. আবেগ নয়, দলিলভিত্তিক বিশ্লেষণ।
২. হক ও বাতিলের মাঝে স্পষ্ট পার্থক্য।
৩. শিয়া অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সুন্নাহর প্রচার।

আমাদের মানহাজ ও বিশ্বাস:

আল্লাহ তা’আলা হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাত কবুল করুন এবং আমাদেরকে সত্য ইতিহাস ধারণ ও প্রচারের তাওফীক দিন।
নবী (সা.) বলেছেন,
»حُسَيْنٌ مِنِّي وَأَنَا مِنْ حُسَيْنٍ، أَحَبَّ اللهُ مَنْ أَحَبَّ حُسَيْنًا«
“হুসাইন আমার অংশ, আর আমি হুসাইনের অংশ। আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন, যে হুসাইনকে ভালোবাসে” (সুনান তিরমিযী, সহীহ)।
এই হাদীসে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকটে হুসাইন (রা.)-এর মর্যাদা ও তাঁর প্রতি তাঁর ভালবাসা। যে কারণে আমারও হুসাইন (রা.)-কে ভালোবাসি।

রেফারেন্স:

১. মাওয়াক্বিফুল মুয়ারাযা ফি আহদি ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়া, মুহাম্মাদ আশ-শাইবানী রচিত।
২. ফাতাওয়া ইবনু তাইমিয়া।
৩. সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, ইমাম যাহাবী।
৪. তাবাকাত ইবনু সা’অদ।
৫. আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ইবনু কাসীর।
৬. সহীহুল জামে’ আলবানী।

Leave a Reply